যিনি কল্পনার ঊর্ধ্বে, তার নামে কল্পনানির্ভর ইবাদত কতটুকু যৌক্তিক?
ইবাদত সম্পর্কে বিস্তারিত :
ইবাদত মানে কি কেবল সুরা পড়া, নাকি সত্যের দাসত্ব?
যে জাতি মসজিদে গিয়ে কেবল কোরানের সুরা আরবি উচ্চারণে পড়াকে ইবাদত মনে করে, কিন্তু কোরানের প্রকৃত নির্দেশনা—জ্ঞান, গবেষণা, ন্যায়বিচার, সত্য প্রতিষ্ঠা—এসব ভুলে যায়, সে জাতি পৃথিবীতে বিজাতীদের হাতে পরাজিত হবেই।
আজকের মুসলিম উম্মাহর এই দুর্বলতার কারণ কী? কারণ আমরা ইবাদতকে কেবল কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। ফলে আমাদের সমাজে অন্যায়-অবিচার, অজ্ঞতা, দুর্নীতি ও দুর্বলতা বেড়েই চলেছে।
কিন্তু কোরান কি বলে? ইবাদত কি সত্যিই শুধু নামাজ-রোজা, সুরা পড়া, বা যিকির করা? নাকি এর অর্থ আরও বিস্তৃত?
ইবাদত শব্দের প্রকৃত অর্থ
"ইবাদত" শব্দটি আরবি "عِبَادَة" (ʿibādah) থেকে এসেছে, যার মূল রুট "ع ب د" (ʿA-B-D)। এই রুট শব্দের অর্থ হলো দাসত্ব করা, অনুগত হওয়া, বাধ্য হওয়া, সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা।
অর্থাৎ, ইবাদত মানে কেবল কিছু ধর্মীয় আচার পালন করা নয়, বরং সত্যের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
কিন্তু আজকের মুসলিম সমাজে আমরা ইবাদতকে শুধু নামাজ-রোজা, হজ, যিকির ও দোয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। আমরা কোরান নিয়ে গবেষণা করি না, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি না, সত্যের পথে দাঁড়াই না—এর ফলে আমরা দিন দিন দুর্বল ও অপমানিত হচ্ছি।
কোরানে ইবাদত শব্দের ব্যবহার
১. ইবাদত মানে সত্যের দাসত্ব করা
وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ (৫১:৫৬)

প্রচলিত অনুবাদে "ইবাদত" মানে কেবল উপাসনা বোঝানো হয়।
কিন্তু "لِيَعْبُدُونِ" শব্দ এসেছে "ع ب د" রুট থেকে, যার প্রকৃত অর্থ সত্যের দাসত্ব করা, আল্লাহর বিধান মেনে চলা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।
তাই এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায়: "আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি যেন তারা আমার বিধান অনুযায়ী জীবন গড়ে তোলে।"
কিন্তু আমরা এই আয়াতকে কেবল নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। ফলে আমরা সত্যের দাসত্ব না করে, অন্যায়, লোভ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাস হয়ে গেছি।
২. ইবাদত মানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوا۟ قَوَّٰمِينَ بِٱلْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلَّهِ (৪:১৩৫)

সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করাও ইবাদত।
কেবল মসজিদে নামাজ পড়লেই ইবাদত পূর্ণ হয় না, বরং সমাজে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোও ইবাদত।
আজ আমরা কি সত্যের পক্ষে দাঁড়াই?
আমরা কি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি?
আমরা কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেই?
নেই। তাই আমরা দুর্বল, অপমানিত।
৩. ইবাদত মানে জ্ঞান ও গবেষণা করা
هَلْ يَسْتَوِي ٱلَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ (৩৯:৯)

এখানে "জানা" মানে শুধু ধর্মীয় জ্ঞান নয়, বরং বিজ্ঞান, ইতিহাস, প্রযুক্তি—সকল বাস্তব জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত।
কেবল নামাজ পড়লে ইবাদত হয় না, বরং চিন্তা ও গবেষণা করাও ইবাদত।
আজকে মুসলিমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কতটা পিছিয়ে?
আমরা গবেষণায় কতটা অগ্রগামী?
আমরা তো এখন শুধু অন্য জাতির তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করি। আমরা নিজেরা কিছুই উদ্ভাবন করি না, কিছুই গবেষণা করি না।
এই অজ্ঞতা কি ইবাদত?
৪. ইবাদত মানে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা ও গবেষণা করা
قُلْ سِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ بَدَأَ ٱلْخَلْقَ (২৯:২০)

আল্লাহ মানুষকে গবেষণা করতে, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে এবং সত্য খুঁজে বের করতে বলেছেন।
সৃষ্টির রহস্য অন্বেষণ করাও ইবাদতের অংশ।
কিন্তু আমরা কি তা করছি?
নাকি আমরা শুধু নামাজ পড়ে মনে করছি যে আমাদের দায়িত্ব শেষ?
আজকের মুসলিম সমাজের মূল সমস্যা কী?
আমরা ইবাদতকে কেবল কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। ফলে:



ফলাফল?

***মূলকথা: ইবাদত মানে কেবল নামাজ, রোজা, হজ নয়। ইবাদত মানে সত্যের দাসত্ব করা, জ্ঞানচর্চা করা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
যদি আমরা সত্যের দাসত্ব না করি, তাহলে মিথ্যার দাসত্ব করতেই হবে।
মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ তখনই সম্ভব, যখন আমরা কোরানের প্রকৃত শিক্ষায় ফিরে যাব।
যিনি কল্পনার ঊর্ধ্বে, তার নামে কল্পনানির্ভর ইবাদত কতটুকু যৌক্তিক?
১. যিনি কল্পনার ঊর্ধ্বে, তার জন্য আনুষ্ঠানিক ইবাদত করা কি যৌক্তিক?
প্রশ্ন:


"তার তুল্য কিছুই নেই।" (সূরা আশ-শূরা ৪২:১১)


(১) প্রতীক তৈরি করা (Symbolism)



"তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের এই পথেই পেয়েছি।" (সূরা যুখরুফ ৪৩:২২)

(২) কুসংস্কার ও কল্পনাবিলাসের জন্ম দেওয়া



"আল্লাহ তোমাদের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তোমাদের নৈতিকতা ও তাকওয়া চান।" (সূরা আল-হজ ২২:৩৭)

(৩) সত্যিকারের আত্মসমর্পণ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া



"ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সালাত করে, অথচ তাদের সালাতের ব্যাপারে উদাসীন। তারা শুধু লোক দেখানোর জন্য তা করে এবং তারা সাধারণ উপকারী জিনিস (ماعون) দিতে অস্বীকার করে।" (সূরা মাউন ১০৭:৪-৭)

















যদি কল্পনানির্ভর আনুষ্ঠানিক ইবাদত ভুল হয়, তাহলে প্রকৃত ইবাদত কীভাবে হবে?
*******************************************

"আল্লাহ ন্যায়বিচার ও সৎকর্মের আদেশ দেন এবং অসৎকর্ম ও অন্যায় থেকে বিরত থাকতে বলেন।" (সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)






"যারা নিজেদের প্রবৃত্তিকে উপাস্য বানিয়েছে, তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।" (সূরা আল-জাসিয়া ৪৫:২৩)














No comments:
Post a Comment