বোরখা সৃষ্টির ইতিহাস: সত্য জানুন ও অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন
বোরখা বা মুখ-ঢাকা পর্দা যে ইসলামিক পোশাক হিসেবে পরিচিত, তার উৎপত্তি বা ইতিহাসকে যদি কোরআন-ভিত্তিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুঁটিয়ে দেখা যায়, তাহলে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মুখোমুখি হই—যা প্রচলিত ব্যাখ্যার চেয়ে একেবারেই আলাদা।
১. কোরআনে ‘বোরখা’ বা মুখ ঢাকার নির্দেশ নেই
কোরআন শরীফে কোথাও মুখ ঢাকার, চেহারা লুকানোর, কিংবা বোরখা পরার কোনো স্পষ্ট নির্দেশ নেই। বরং কোরআনে পর্দা বা শালীনতা সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে—যেখানে নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখার, নিজ নিজ লজ্জাস্থান রক্ষা করার এবং নিজেদের মর্যাদা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (সূরা আন-নূর ২৪:৩০-৩১)।
কোরআনে নারীকে বলা হয়েছে:
> "...তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে..."
— (সূরা আন-নূর ২৪:৩১)
কিন্তু এখানে চেহারা ঢাকতে হবে—এমন কিছু বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে সৌন্দর্য প্রকাশে সংযমী থাকতে।
২. বোরখার উৎপত্তি আরব সমাজ থেকে নয়, পারস্য ও বাইজেন্টাইন সভ্যতা থেকে
ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, মুখ ঢাকার রীতি ইসলামের আগেও পারস্য, বাইজেন্টাইন এবং হিন্দু সংস্কৃতিতে প্রচলিত ছিল। ধনী ও সম্ভ্রান্ত নারীরা দাসীদের থেকে আলাদা দেখানোর জন্য বোরখা পরতেন। এটিকে সম্মান ও সামাজিক শ্রেণিবিভাগের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
ঐতিহাসিক উৎসগুলো বলছে:
পারস্যের জমিদার শ্রেণির নারীরা মুখ ঢাকতেন।
বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানরাও রাজপ্রাসাদে নারীদের পর্দার আড়ালে রাখতেন।
পরবর্তীতে এই সংস্কৃতি আরব সমাজে ঢুকে পড়ে এবং ইসলামিক শরিয়া নামে চালু হয়।
৩. ‘জিলবাব’ ও ‘খিমার’ শব্দের প্রকৃত অর্থ বিকৃত করা হয়েছে
কোরআনে এসেছে “জিলবাব” এবং “খিমার” শব্দদ্বয়। এগুলোর প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এটি এমন পোশাক নির্দেশ করে যা একজন নারীর দেহকে মার্জিতভাবে ঢেকে রাখে, কিন্তু মুখ ঢাকার কোনো কথা বলা হয়নি।
উদাহরণ:
> "...তারা যেন তাদের খিমার দিয়ে বুক ঢেকে রাখে..."
— (সূরা আন-নূর ২৪:৩১)
এখানে মাথা বা মুখ নয়, বরং বুক ঢাকার কথা বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, ইসলাম নারীকে পরিশীলিত পোশাক পরার পরামর্শ দেয়, মুখ ঢাকার নির্দেশ নয়।
৪. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বোরখা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে
উমাইয়া ও আব্বাসীয় খেলাফতের সময় নারীদের ঘরবন্দি রাখার জন্য বোরখাকে ধর্মীয়ভাবে বৈধ বলে প্রচার করা হয়। শাসকশ্রেণি চেয়েছিল নারীরা যেন ঘরের বাইরে কম যায়, যাতে সমাজে পুরুষের একচেটিয়া আধিপত্য থাকে। এই উদ্দেশ্যে তারা বোরখাকে 'ইসলামিক পোশাক' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়।
৫. ইসলাম নারীর স্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে, শিকল নয়
যেখানে কোরআন নারীকে চিন্তা করার অধিকার, মত প্রকাশ, সম্পত্তির মালিকানা, শিক্ষা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে, সেখানে তাকে মুখ ঢাকার বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ করা ইসলামিক হতে পারে না।
সত্য জানুন, প্রচলিত মিথ ভাঙুন
বোরখা ধর্ম নয়, এটি সংস্কৃতি। আর ইসলাম সংস্কৃতি নয়, চেতনাভিত্তিক দীন। কোরআনের আলোয় ফিরে তাকালে বোঝা যায়, ইসলাম নারীর আত্মমর্যাদা, জ্ঞান, আত্মপ্রকাশ ও নিরাপত্তার পক্ষে।
আপনি যদি চান এই সত্য মানুষ জানুক, তাহলে শেয়ার করুন। কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা ছড়িয়ে দিন—যেখানে মানুষ স্বাধীন, চিন্তাশীল এবং মর্যাদাবান।