কোরআনের বাইরে ওহী এসেছে কি না—কোরআনের ভিত্তিতে বিচার
কোরআনের ভাষ্যমতে, ওহী বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো—দ্বীনের বিধান নির্ধারণের জন্য কোরআনের বাইরে কোনো ওহী এসেছে কি না?
১. ওহীর বিভিন্ন ধরন কোরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে
কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ বিভিন্নভাবে ওহী পাঠান:
ক) নবীদের প্রতি ওহী (শরিয়াহ-বিধান নির্ধারণের জন্য)
➡ (৪২:৫১) وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَآءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِىَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَآءُ
➡ “কোনো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহী দ্বারা, অথবা পর্দার আড়াল থেকে, অথবা কোনো বার্তাবাহক পাঠিয়ে যার মাধ্যমে তিনি যা ইচ্ছে তা ওহী করেন।”
🔹 এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ওহী তিনভাবে হয়:
1. সরাসরি ইঙ্গিত বা ওহী
2. পর্দার আড়াল থেকে (যেমন মুসার সাথে তুর পাহাড়ে কথা)
3. ফেরেশতা পাঠিয়ে (যেমন জিবরাইলের মাধ্যমে কোরআন
📌 প্রশ্ন: এই ওহীগুলো কি কেবল কোরআনের জন্য নাকি কোরআনের বাইরেও এসেছে?
খ) কোরআনই পূর্ণাঙ্গ বিধান নাকি আরও কিছু এসেছে?
➡ (৬:১১৪) أَفَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْتَغِى حَكَمًا وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ إِلَيْكُمُ ٱلْكِتَٰبَ مُفَصَّلًا
➡ “আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক বানাব? অথচ তিনিই তোমাদের জন্য কিতাব নাযিল করেছেন বিস্তারিতভাবে।”
➡ (৬:৩৮) مَّا فَرَّطْنَا فِى ٱلْكِتَٰبِ مِن شَىْءٍ
➡ “আমি কিতাবে কিছুই বাদ দেইনি।”
🔹 এই আয়াতগুলোর মূল বক্তব্য:
কোরআনই বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ বিধান
দ্বীনের জন্য কোরআনই যথেষ্ট
📌 তাহলে, কোরআনের বাইরে শরিয়াহ-বিধানের জন্য ওহী আসার প্রমাণ নেই।
২. কোরআনের বাইরে অন্যদের প্রতি ওহী এসেছে কিনা?
কোরআনে কিছু ক্ষেত্রে নবী ছাড়া অন্যদের প্রতিও ওহী এসেছে, তবে সেগুলো শরিয়াহ-বিধান নির্ধারণের জন্য ছিল না।
🔹 (২৮:৭) وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ
➡ "আমি মুসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, তাকে দুধ পান করাও।"
✔ এটি শরিয়াহ-বিধান নয়, বরং ব্যক্তিগত দিকনির্দেশনা।
🔹 (১৬:৬৮) وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى ٱلنَّحْلِ
➡ "তোমার রব মধুমক্ষীকে ওহী করলেন..."
✔ এটি প্রকৃতির পরিচালনার জন্য ওহী, শরিয়াহ-বিধানের জন্য নয়।
📌 তাহলে, কোরআনের বাইরে কিছু ওহী এসেছে, কিন্তু তা দ্বীনের বিধান নির্ধারণের জন্য নয়।
৩. কোরআনের বাইরে শরিয়াহ-বিধান নির্ধারণকারী ওহী এসেছে কি?
➡ (৪৫:৬) تِلْكَ ءَايَٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَ ٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ يُؤْمِنُونَ
➡ "এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমি এগুলো তোমার কাছে যথাযথভাবে শুনাচ্ছি। তবে তারা আল্লাহ ও তার আয়াতের পর আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে?"
🔹 এই আয়াত অনুযায়ী:
আল্লাহর আয়াতই চূড়ান্ত নির্দেশ
আয়াতের পর অন্য কিছুকে দ্বীনের অংশ হিসেবে নেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ
📌 সুতরাং, কোরআন অনুযায়ী শরিয়াহ-বিধান নির্ধারণের জন্য কোরআনের বাইরের কোনো ওহীর অস্তিত্ব নেই
✅ কোরআনের বাইরে ওহী এসেছে, তবে তা ব্যক্তিগত নির্দেশনার জন্য (যেমন মুসার মা, মধুমক্ষী, ফেরেশতা)।
❌ কোরআনের বাইরে শরিয়াহ-বিধান নির্ধারণের জন্য কোনো ওহী এসেছে—এমন কোনো প্রমাণ কোরআনে নেই। বরং কোরআনই পূর্ণাঙ্গ
বিধান বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
👉 তাহলে, দ্বীনের মূল বিধান কেবল কোরআন থেকেই নির্ধারিত হয়।
শুধু কোরআন থেকে উত্তরঃ
(১) ওহী কীভাবে আসে?
➡ (৪২:৫১) وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَآءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِىَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَآءُ
✔ তিনভাবে ওহী আসে:
- সরাসরি ইঙ্গিত (وَحْيًا)
- পর্দার আড়াল থেকে (مِن وَرَآءِ حِجَابٍ)
- ফেরেশতার মাধ্যমে (يُرْسِلَ رَسُولًا)
📌 প্রশ্ন: এই ওহী কাদের জন্য?
(২) কোরআনই কি পূর্ণাঙ্গ ও যথেষ্ট?
➡ (৬:১১৪) أَفَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْتَغِى حَكَمًا وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ إِلَيْكُمُ ٱلْكِتَٰبَ مُفَصَّلًا
✔ "আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিধানদাতা বানাব, যখন তিনি কিতাবকে বিস্তারিতভাবে অবতীর্ণ করেছেন?"
➡ (৬:৩৮) مَّا فَرَّطْنَا فِى ٱلْكِتَٰبِ مِن شَىْءٍ
✔ "আমি কিতাবে কিছুই বাদ দেইনি।"
📌 এই দুই আয়াত বলছে, দ্বীনের জন্য কোরআনই যথেষ্ট। তাহলে, শরীয়াহ-বিধান নির্ধারণের জন্য কোরআনের বাইরে ওহী থাকার প্রশ্নই আসে না।
(৩) নবী ছাড়া অন্যদের প্রতিও ওহী এসেছে কিনা?
➡ (২৮:৭) وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ
✔ "আমি মুসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, তাকে দুধ পান করাও।"
➡ (১৬:৬৮) وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى ٱلنَّحْلِ
✔ "তোমার রব মধুমক্ষীকে ওহী করলেন..."
📌 এগুলো ব্যক্তিগত নির্দেশনার জন্য, শরীয়াহ-বিধানের জন্য নয়।
(৪) কোরআনের বাইরের কিছু মানা যাবে?
➡ (৪৫:৬) تِلْكَ ءَايَٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَ ٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ يُؤْمِنُونَ
✔ "এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমি এগুলো তোমার কাছে যথাযথভাবে শুনাচ্ছি। তবে তারা আল্লাহ ও তার আয়াতের পর আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে?"
📌 এই আয়াত অনুযায়ী, কোরআনের পর অন্য কিছুকে দ্বীনের অংশ হিসেবে মানা ভুল।
🔎 উপসংহার (শুধুমাত্র কোরআনের ভিত্তিতে)
✅ কোরআনের বাইরেও ওহী এসেছে, কিন্তু তা ব্যক্তিগত নির্দেশনার জন্য, শরীয়াহ-বিধানের জন্য নয়।
❌ কোরআনের বাইরে দ্বীনের বিধান নির্ধারণকারী ওহী এসেছে—এমন কোনো প্রমাণ কোরআনে নেই।
📌 অর্থাৎ, দ্বীনের মূল বিধান কেবল কোরআন থেকেই নির্ধারিত হয়।