কুরআনে সরাসরি কোনো আয়াতে নেই যে, মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতিতে নামাজ (সালাহ) পড়েছেন বা অন্যদের সেই নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছেন। তবে কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় "সালাহ কায়েম করা" বা "সালাহ প্রতিষ্ঠা করা" বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিছু প্রাসঙ্গিক আয়াত:
-
সূরা আনকাবূত ২৯:৪৫
"তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে তা পড়ো এবং সালাহ কায়েম করো। নিশ্চয় সালাহ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।" -
সূরা হজ ২২:৪১
"যারা ক্ষমতা লাভ করলে সালাহ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।"
এছাড়া, কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে "সালাহ কায়েম করার" কথা বলা হলেও সালাহের নির্দিষ্ট নিয়ম বা রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
তাহলে, মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) কি সালাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন?
-
কুরআনে বলা হয়েছে, সালাহ হলো পূর্ববর্তী নবীদেরও দায়িত্ব ছিল:
"এবং আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁদের বংশধরদের নবুওয়ত ও কিতাব দান করেছি এবং তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিয়েছি।" (সূরা আল-আনআম ৬:৮৯)"এবং আমি তাঁকে (ইসমাঈলকে) তাঁর পরিবারের লোকদের সালাহ ও যাকাতের আদেশ দিতে বলেছি।" (সূরা মারিয়াম ১৯:৫৫)
অর্থাৎ, সালাহ মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) নতুন করে শুরু করেননি, বরং পূর্ববর্তী নবীদের দেওয়া আদেশের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।
কুরআনের ভিত্তিতে সালাহর প্রকৃত অর্থ কী?
- "সালাহ" শব্দটি এসেছে "صلة" (সিলা) মূল ধাতু থেকে, যার অর্থ "সংযোগ" বা "সম্পর্ক স্থাপন"।
- এটি এক ধরনের আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া, যা অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে (সূরা আনকাবূত ২৯:৪৫)।
তাহলে প্রচলিত সালাহর পদ্ধতি কোথা থেকে এসেছে?
- কুরআনে সালাহর রাকাত, নিয়ম, সূরা পড়ার পদ্ধতি ইত্যাদি বিস্তারিত উল্লেখ নেই।
- এইসব বিধিবিধান মূলত হাদিস ও পরবর্তী ইসলামী আইনবিদদের ব্যাখ্যার মাধ্যমে এসেছে।
সুতরাং, কুরআনের ভিত্তিতে বলা যায় যে মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) সালাহ কায়েম করেছেন, তবে প্রচলিত নামাজের পদ্ধতি তিনি নিজে নতুন করে তৈরি করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, কারণ কুরআনে সেই পদ্ধতির বিস্তারিত নেই।
প্রশ্নঃ মেরাজ থেকে সালাত নিয়ে এসেছে এ কথা কতটুকু সত্য
"মেরাজ থেকে সালাত এসেছে"—এই দাবির সত্যতা কুরআনের আলোকে
অনেক প্রচলিত বর্ণনায় বলা হয়, মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) মেরাজে গিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে ৫০ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ পান, যা পরে কমিয়ে ৫ ওয়াক্তে নির্ধারিত হয়। কিন্তু কুরআনে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে সালাহ মেরাজ থেকে এসেছে।
১. কুরআনে মেরাজের আলোচনা (সূরা আল-ইসরা ১৭:১)
"পবিত্র মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের এক সময়ে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি।"
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) এক রহস্যময় ভ্রমণে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে সালাহ সংক্রান্ত কোনো বিধানের উল্লেখ নেই।
২. সালাহ মেরাজ থেকে এলে, আগের নবীদের কী ছিল?
কুরআন বলে, সালাহ কেবল মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) এর উপর ফরজ হয়নি, বরং পূর্ববর্তী নবীদের উপরও ছিল।
ইব্রাহিম (আ.):
"হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার বংশধরদের সালাহ কায়েমকারী করো।" (সূরা ইবরাহিম ১৪:৪০)
ইসমাঈল (আ.):
"সে তার পরিবারকে সালাহ ও যাকাতের নির্দেশ দিত।" (সূরা মারিয়াম ১৯:৫৫)
মুসা (আ.):
"আমি তোমাকে (মুসা) নির্বাচন করেছি, তাই তুমি সালাহ কায়েম করো আমার স্মরণের জন্য।" (সূরা ত্বাহা ২০:১৪)
➡️ যদি সালাহ মেরাজ থেকে আসত, তাহলে আগের নবীদের উপর এটি কীভাবে ফরজ ছিল?
৩. কুরআনের কোথাও সালাহর সংখ্যা (৫ ওয়াক্ত) নেই
কুরআন সালাহ কায়েমের কথা বলে, কিন্তু এর নির্দিষ্ট সংখ্যা কোথাও উল্লেখ করেনি।
সালাতের জন্য কিছু সময়ের উল্লেখ আছে, যেমন—
"সুবহে সাদিক থেকে রাত পর্যন্ত" (সূরা ইসরা ১৭:৭৮)
"দিনের দুই অংশ এবং রাতের কিছু সময়ে" (সূরা হুদ ১১:১১৪)
"নিমগ্ন সূর্যের পরে রাতের অংশ এবং ফজরের কুরআন" (সূরা ইসরা ১৭:৭৮)
কিন্তু এগুলো থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করা যায় না।
উপসংহার:
✅ কুরআনের আলোকে বলা যায়, সালাহ মেরাজ থেকে এসেছে—এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
✅ সালাহ মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) থেকে শুরু হয়নি, এটি আগের নবীদের উপরও ফরজ ছিল।
✅ কুরআন সালাহ কায়েমের নির্দেশ দিলেও পাঁচ ওয়াক্ত বা নির্দিষ্ট পদ্ধতির কথা বলে না।
✅ "মেরাজে গিয়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছিল, পরে কমানো হয়েছে"—এই গল্প হাদিস থেকে এসেছে, যার কুরআনে কোনো সমর্থন নেই।
তাই, যদি কুরআন-কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করি, তাহলে বলা যায় যে সালাহ একটি পূর্ব-নির্ধারিত ব্যবস্থা, যা মুহাম্মাদ (পবিত্র কুরআনের অনুসারী হিসেবে) এর মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবে এটি মেরাজ থেকে এসেছে—এমন কোনো কুরআনিক প্রমাণ নেই।
মিরাজের আজগুবি ঘটনা কপি করা আরদা ভিরাজনামা থেকে:
আরদা ভিরাজনামা ; https://theiqra.org/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE/
আজগুবি ঘটনা কপি লিংক; https://theiqra.org/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%87/
