আমি কোন দলের হাদিস মানবো?
প্রত্যেকে দল নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে আবার হাদিস না মানলে কাফের ফতোয়া দেয়। প্রত্যেক দলই একে অপরকে কাফের ফতোয়া দেয়। নিচে বিভিন্ন দলের হাদিস রয়েছে , প্রত্যেকে নিজদের সঠিক বলে মনে করে, কিন্তু সঠিক নির্ণয়নের মানদণ্ড কি?
১. সুন্নি ইসলাম
সুন্নি মুসলিমরা ছয়টি প্রধান হাদিস গ্রন্থকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ (সিহাহ সিত্তাহ) বলে মানে—
- 1. সহিহ বুখারি (ইমাম বুখারি)
- 2. সহিহ মুসলিম (ইমাম মুসলিম)
- 3. সুনান আবু দাউদ (ইমাম আবু দাউদ)
- 4. সুনান আত-তিরমিজি (ইমাম তিরমিজি)
- 5. সুনান আন-নাসাঈ (ইমাম আন-নাসাঈ)
- 6. সুনান ইবনে মাজাহ (ইমাম ইবনে মাজাহ)
এ ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হাদিস গ্রন্থ রয়েছে, যেমন মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদ আহমাদ ইত্যাদি।
২. শিয়া ইসলাম
শিয়ারা তাদের হাদিস সংগ্রহ আলাদা রাখে এবং তারা সুন্নি হাদিসের অনেক অংশ গ্রহণ করে না। তাদের চারটি প্রধান হাদিস গ্রন্থ—
- 1.আল কাফি (শেইখ কুলাইনি)
- 2. মান লা ইয়াহযুরুহুল ফাকিহ (শেইখ সাদুক)
- 3. তাহযীবুল আহকাম (শেইখ তুসি)
- 4. আল ইস্তিবসার (শেইখ তুসি)
শিয়ারা মূলত আহলে বাইতের (আলী ও তাঁর বংশধরদের) উক্তি ও কাজকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং তাদের হাদিস সংগ্রহ সেই ভিত্তিতেই গঠিত।
৩. খারিজি ও ইবাদি
- কিতাব আল-রওয়া
- মুসনাদ আর-রাবি’ ইবনে হাবিব (ইবাদি মতবাদে গুরুত্বপূর্ণ)
৪. কুরআনিস্ট (Ahle Quran)
এরা হাদিসের কোনো সংকলন গ্রহণ করে না এবং শুধুমাত্র কুরআনকে একমাত্র বিধান হিসেবে মানে।
৫. আহমদিয়া (কাদিয়ানি ও লাহোরি শাখা)
আহমদিয়া মুসলিমরা সুন্নি হাদিসগুলোকেই মানে, তবে তাদের নেতা মির্যা গুলাম আহমদের লেখাগুলোকেও গুরুত্ব দেয়।
এভাবেপ্র ত্যেক সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব হাদিস গ্রহণ ও ব্যাখ্যা করে।
৬. সালাফি (আহলে হাদিস)
শুধুমাত্র সহিহ হাদিস গ্রহণ করে, অন্যসবকে বাতিল মনে করে।
সালাফিরা মূলত সুন্নি হাদিস গ্রন্থগুলোকেই অনুসরণ করে, তবে তারা সহিহ হাদিস ছাড়া অন্য কোনো সংকলন গ্রহণ করতে চায় না।
তারা সাধারণত সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, এবং শেখ আলবানির যাচাইকৃত হাদিস সংগ্রহ অনুসরণ করে।
এখন কোরআন থেকে যদি সমাধান খুঁজি তাহলে সমাধান দাঁড়ায়;
কোন দল সঠিক পথে আছে—এই প্রশ্নের উত্তর কুরআনের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সত্য পথ দলীয় পরিচয়ে নির্ধারিত হয় না, বরং আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি আনুগত্যের ওপর নির্ভর করে।
কুরআনের বক্তব্য:
- "নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা (দ্বীন) হলো আত্মসমর্পণ (ইসলাম)।" (সূরা আলে ইমরান ৩:১৯)
- "তাদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি হয় কেবল জ্ঞান আসার পর, পারস্পরিক বিদ্বেষবশত।" (সূরা শূরা ৪২:১৪)
- "যারা নিজেদের দ্বীনে বিভক্ত হয়েছে ও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে, তুমি তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। তাদের ব্যাপার আল্লাহর হাতে, তারপর তিনি তাদের জানিয়ে দেবেন যা তারা করত।" (সূরা আনআম ৬:১৫৯)
- সুরা আল-ইমরান (3:103) "আর আল্লাহর রশ্মিতে তোমরা একত্রিত হয়ে, এবং বিভক্ত হয়ো না..."
- সুরা রুম (30:31-32) "আল্লাহর দিকে ফিরে এসো, তাঁকে ভয় করো এবং সালাত কায়েম করো। আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না— যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে পরিণত হয়েছে, প্রত্যেক দলই যা তাদের কাছে আছে তাতে আনন্দিত।"
- "আল্লাহ তাঁর বিধানে কাউকে শরীক করেন না।"(১৮:২৬)
এখানে কোরআন স্পষ্টভাবে বলছে যে দ্বীনকে বিভক্ত করা যাবে না এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ হওয়া যাবে না। দলে দলে ভাগ হওয়াকে আল্লাহ মুশরিক বলেছেন।
কুরআন অনুযায়ী সঠিক পথ:
- দলীয় বিভক্তি এড়িয়ে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশ মানা।
- কুরআনকে চূড়ান্ত বিধান হিসেবে গ্রহণ করা। (সূরা আল-জাসিয়া ৪৫:৬)
- ন্যায় ও সত্যকে গ্রহণ করা, বিদ্বেষমূলক দলাদলি থেকে দূরে থাকা।
তাহলে আজকের বাস্তবতায় কী করা উচিত?
- কোনো নির্দিষ্ট দলের অন্ধ অনুসরণ না করে শুধু কুরআনের নির্দেশনাকে অনুসরণ করা।
- হাদিসকে কুরআনের আলোকে যাচাই করা, কারণ কুরআন নিজেকে "ফুরকান" (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) বলে দাবি করে।
- ঐতিহ্যগত ধর্মীয় মতবাদ ও কুসংস্কার বর্জন করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা।
শেষকথা: কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, বরং যে ব্যক্তি কুরআনের নির্দেশ মেনে চলে, সত্য গ্রহণ করে, ন্যায়পরায়ণ হয়—সে-ই সঠিক পথে রয়েছে। তাই, কুরআনই একমাত্র মানদণ্ড। (সূরা বাকারা ২:২)
No comments:
Post a Comment