কুরআনের আলোকে উগ্রবাদী, ধর্মান্ধ ও জঙ্গির সংজ্ঞাদ্বীন শুধুমাত্র কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের নাম নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার ভিত্তি। কিন্তু কিছু মানুষ দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা ও সহিংসতার পথে চলে, যা কুরআনের মূলনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত।
১️⃣ উগ্রবাদী (Extremists) কারা?
সুরা আন-নিসা (৪:১৭১)يَا أَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لَا تَغْلُوا۟ فِى دِينِكُمْ
রুট অর্থ:"হে কিতাবধারীরা! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি (تَغْلُوا۟) করো না।"
মূল ব্যাখ্যা:"تَغْلُوا۟" (তাগলু) শব্দের রুট গা-ল-ওয়া (غلو), যার অর্থ মাত্রাতিরিক্ততা, বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন।
দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা হলো সংযম ও ভারসাম্য (২:১৪৩), কিন্তু উগ্রবাদীরা নিজেদের মতকে একমাত্র সত্য ধরে নেয় এবং অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়।
উদাহরণ:
কারো মতের সাথে না মিললে তাকে কাফের বা বিদ্বেষী ঘোষণা করা। নিজের মতবাদকে অন্যদের উপর বলপ্রয়োগে চাপিয়ে দেওয়া। নিজেদের মতকে আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দেওয়া।
কুরআনের শিক্ষা: ইসলাম মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে (৩৯:১৮), কিন্তু উগ্রবাদীরা সেটাকে দমন করতে চায়।২️⃣ ধর্মান্ধ (Fanatics) কারা?
কুরআনের আয়াত: সুরা আল-মায়েদা (৫:১০৪)وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُوا۟ بَلْ نَتَّبِعُ مَآ أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ ءَابَآءَنَا
রুট অর্থ:"যখন তাদের বলা হয়, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তা অনুসরণ করো’, তখন তারা বলে, ‘আমরা তো সেই পথই অনুসরণ করবো, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি।’"
মূল ব্যাখ্যা:ধর্মান্ধরা অন্ধভাবে পূর্বপুরুষদের ধ্যান-ধারণাকে আঁকড়ে ধরে, সত্য যাচাই করতে চায় না।
কুরআন বারবার বলে যে, যে কোনো মত যাচাই করতে হবে, কারণ অন্ধবিশ্বাস মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় (১৭:৩৬)।
উদাহরণ: "আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেভাবে দ্বীন পালন করতো, সেটাই চূড়ান্ত" – এই ধরণের মনোভাব। নতুন গবেষণা, চিন্তা ও বিশ্লেষণকে বিরোধিতা করা। প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ মনে করা। কুরআনের শিক্ষা: দ্বীনের ভিত্তি হলো যুক্তি, প্রমাণ ও সত্য অনুসন্ধান, কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস নয় (৩৯:১৮)।৩️⃣ জঙ্গি (Terrorists) কারা?
কুরআনের আয়াত: সুরা আল-মায়েদা (৫:৩২)مَنْ قَتَلَ نَفْسًۭا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعًۭا
রুট অর্থ:"যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে বা পৃথিবীতে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ ছাড়া, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করলো।"
মূল ব্যাখ্যা:দ্বীনের নামে মানুষ হত্যা করা সম্পূর্ণ হারাম।
যারা ভয় সৃষ্টি করে, অন্যদের উপর বলপ্রয়োগ করে, হত্যা করে, তারা কুরআনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে।
কুরআন বলছে, শান্তি প্রতিষ্ঠাই প্রকৃত দ্বীন (২:২০৮)।
উদাহরণ: নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা। দ্বীনের নামে সহিংসতা ও জোরজবরদস্তি করা। নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে জিম্মি করা বা ভয় দেখানো। কুরআনের শিক্ষা:দ্বীনের সত্যতা প্রমাণের জন্য কোনো বলপ্রয়োগ বা সহিংসতা বৈধ নয় (২:২৫৬)।
যারা সমাজে ফ্যাসাদ (অরাজকতা) সৃষ্টি করে, তারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করছে (২:২০৫)।
সারসংক্ষেপ: কুরআনের আলোকে উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিবাদ কুরআনের শিক্ষা:দ্বীন সংযম, মুক্ত চিন্তা ও ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচার চায়।
উগ্রবাদী, ধর্মান্ধ ও জঙ্গিরা কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার বিপরীত পথে চলে।
কোনো জোরজবরদস্তি নেই (২:২৫৬), বরং জ্ঞান ও যুক্তিই সত্যের পথ দেখায় (৩৯:১৮)।
সহজ ভাষায়:
উগ্রবাদী = বাড়াবাড়ি করে নিজের মত চাপিয়ে দেয় ধর্মান্ধ = যাচাই না করে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে জঙ্গি = দ্বীনের নামে মানুষ হত্যা ও সহিংসতা করে দ্বীন মানুষের জন্য সহজ করা হয়েছে (২২:৭৮), কিন্তু উগ্রবাদীরা একে কঠিন ও সহিংস বানাতে চায়। কুরআনের সত্যিকার শিক্ষা হলো শান্তি, ন্যায়বিচার ও মুক্ত চিন্তা।
No comments:
Post a Comment