Labels

আকিকার উৎপত্তি কোথায় থেকে? (1) আমি আল্লাহকে দেখিনাই তাহলে বিশ্বাস করবো কিভাবে ? (1) আমি কোন দলের হাদিস মানবো? (1) আয়াত রহিত না রূপান্তর? (1) আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য কিভাবে করতে হবে? (1) ইসলামের দল শাখা ও উপশাখার পূর্ণ তালিকা (1) ঈদের আগে ফিতরা দেওয়া কি কুরআনসম্মত? (1) ঈদের নামাজ কত তাকবীর? (1) ঈমান কিসের ভিত্তিতে হবে? (1) কুকুরের মাংস খাওয়া হারাম নাকি হালাল? (1) কুরআন: শুধু তোতাপাখির মতো পড়ার জন্য নাকি বাস্তবায়নের জন্য? (1) কুরআনে পর্দা পোশাক ও হেফাজত (1) কুরআনের আলোকে পোশাক – রুট বিশ্লেষণ দিয়ে প্রচলিত ভ্রান্তি ভাঙুন (1) কুরআনের ভাষায় ‘মূর্তি’ মানে কি শুধু ভাস্কর্য? (1) কোরআনের দৃষ্টিতে অধিকাংশ মানুষ কেমন ? (1) কোরআনের বাইরে ওহী এসেছে কি ? (1) চার বিবাহ কোরানে নেই! (1) জাহান্নাম আগুন নয় চেতনাগত পতনের নাম (1) জিনা কি শুধু শারীরিক সম্পর্ক? (1) দাঁড়ি টুপি জুব্বা ইসলামের অংশ নয় (1) ধর্ষণ দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয় বেশি কেন? Part - 2 (1) নবীকে দরুদ পাঠানো সম্ভব? (1) নামাজ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না ! (1) নামাজ/সালাত পড়তে হবে নাকি প্রতিষ্ঠা করতে হবে ? (1) নারীদের জ্ঞান অর্জনের কোনো অধিকার নেই? (1) পার্সিয়ান ঈদ বনাম কোরআনের ইদান (1) বোরখা সৃষ্টির ইতিহাস (1) মুসলিম কে হতে পারে? (1) মুসলিম দেশগুলোতে খুন (1) মুসলিম দেশগুলোতেই খুন ধর্ষণ দুর্নীতি নৈতিক অবক্ষয় বেশি কেন? Part - 01 (1) রুকু এবং সিজদা কী? পার্থক্য কী? (1) লাইলাতুল কদর (1) সালাত পড়বেন নাকি প্রতিষ্ঠা করবেন? (1) সূরা আল কদরের রুট অর্থ (قَدْرٌ): (1) হাউজে কাউসার কি ? কোরআনিক বিশ্লেষণ (1) হালাল শব্দের প্রকৃত অর্থ কি ? (1) হিকমাহ (1)

পার্সিয়ান ঈদ বনাম কোরআনের ইদান


আরবি عِيدًا (ঈদান) শব্দটি আসলে "পুনরাবৃত্তি" বা "ফেরত আসা" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা ফার্সি ভাষার "ঈদ" অর্থ "আনন্দ-উৎসব"-এর থেকে ভিন্ন।


বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ:

1. সুরা মায়েদা ৫:১১৪-এর প্রসঙ্গ
এখানে ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছে একটি আসমানী নিদর্শন ও খাদ্যপ্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা করছেন, যা হবে তার অনুসারীদের জন্য "ঈদান" বা পুনরাবৃত্তিমূলক নিদর্শন। এটা আসলে কোনো নির্দিষ্ট বার্ষিক উৎসবের ইঙ্গিত নয়, বরং এটি একবার প্রাপ্তির পর বারবার স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


2. আরবিতে "ঈদ" শব্দের প্রকৃত অর্থ

মূলধাতু عَوَدَ (আওদা) থেকে এসেছে, যার অর্থ ফিরে আসা, পুনরাবৃত্তি হওয়া, পুনরুদ্ধার করা।

তাই কুরআনিক অর্থ অনুযায়ী "ঈদ" মানে শুধু আনন্দোৎসব নয়, বরং এমন কিছু যা বারবার ফিরে আসে, পুনরুদ্ধার হয়, বা সুনিশ্চিতভাবে প্রত্যাবর্তন করে।


3. ফার্সি "ঈদ" বনাম কুরআনিক "ঈদান"

ফার্সি ভাষায় "ঈদ" মানে শুধু আনন্দ-উৎসব ও খুশি বোঝায়।

কিন্তু কুরআনের "ঈদান" শব্দের মধ্যে আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একবার প্রাপ্ত কিছু যা বারবার স্মরণীয় হয় এবং বারবার ফিরে আসতে পারে।

তাই আমাদের প্রচলিত ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) যদি মূল কুরআনিক অর্থে না হয়, তবে সেটি মূলত ফার্সি সংস্কৃতির প্রভাবের মাধ্যমে প্রচলিত হয়েছে বলেই মনে হয়।

তাহলে আমরা কি বাইবেলের অনুসরণ করছি?

খ্রিস্টানদের Holy Communion বা Lord’s Supper ধারণাটিও ঈসা (আঃ)-এর ঐ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

আরো গভীর বিশ্লেষণ:

 প্রশ্নের গভীরতা বিচার করলে দেখা যায়, প্রচলিত ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) এবং কুরআনের "ঈদান" শব্দের অর্থ ও ঐতিহাসিক উৎস সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন। এই বিশ্লেষণে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করব:


১. কুরআনে ঈদ শব্দের একমাত্র ব্যবহার (মায়েদা ৫:১১৪)

ঈসা (আঃ)-এর প্রার্থনা ও "ঈদান" শব্দের ব্যবহার

সুরা মায়েদার ১১৪ আয়াতে ঈসা (আঃ) বলেছেন:

> رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ
"হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠান; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে 'ঈদান' (عِيدًا) এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন"

এখানে "ঈদান" শব্দটি এসেছে মূল عَوَدَ (আওদা) ধাতু থেকে, যার অর্থ—

  • পুনরাবৃত্তি হওয়া (Recurring)
  • ফিরে আসা (Returning)
  • পুনরুদ্ধার হওয়া (Restoration)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়:

এটি কোনো বার্ষিক উৎসবের জন্য বলা হয়নি। বরং ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছ থেকে একটি নিদর্শন চেয়েছেন, যা তাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ঈসা (আঃ) এবং তার অনুসারীরা সেটাকে "ঈদান" বলবেন, কারণ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত একবারের নিদর্শন, যা তাদের মনে বারবার ফিরে আসবে।


২. "ঈদ" শব্দের প্রচলিত ধারণার উৎপত্তি

বর্তমান সময়ে যে ঈদ পালন করা হয়, তার ধারণা আসলে কুরআন থেকে এসেছে, নাকি অন্য উৎস থেকে?

(ক) ফার্সি ভাষায় "ঈদ" শব্দের অর্থ

ফার্সি ভাষায় "ঈদ" মানে আনন্দ উৎসব।

এটি মূলত মাজুসি (জরাথুস্ত্রী) ধর্মের উৎসবের সাথে সম্পর্কিত।

মাজুসিদের মধ্যে Nowruz (নওরোজ) ও Mehregan নামে দুটি প্রধান বার্ষিক উৎসব ছিল, যা পরে মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করে।


(খ) খ্রিস্টানদের "ঈদ" ধারণা

বাইবেলে বলা হয়েছে, ঈসা (আঃ) তার অনুসারীদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপ্রাপ্তির ঘটনা উদযাপন করতে বলেছেন।

খ্রিস্টানরা একে Holy Communion বা Eucharist হিসেবে মানে, যেখানে তারা বিশ্বাস করে যে ঈসা (আঃ)-এর দেহ ও রক্তের প্রতীকস্বরূপ খাবার গ্রহণ করা হয়।

সুতরাং, ঈসা (আঃ)-এর প্রার্থিত "ঈদান" খ্রিস্টানদের কাছে একটি ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।


(গ) ইসলামে "ঈদ" কবে এবং কীভাবে চালু হলো?

কুরআনে ঈদের কোনো উল্লেখ নেই, তবে পরবর্তী ঐতিহাসিক নথিতে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার প্রচলনের কথা পাওয়া যায়।

প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদের (সাঃ) সময় মদিনায় দুটি উৎসব ছিল (মাজুসিদের Nowruz ও Mehregan-এর অনুরূপ), যা ইসলামিক চেতনার সাথে সংযুক্ত হয়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় রূপান্তরিত হয়।

এটি শুধুমাত্র হাদিস ও ঐতিহাসিক নথিতে পাওয়া যায়, কিন্তু কুরআনে নেই।


৩. কুরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে "ঈদ" পালন কতটুকু ন্যায্য?

(ক) কুরআনে ধর্মীয় উৎসবের নির্দেশনা কোথায়?

কুরআনে কোথাও ঈদ পালনের আদেশ নেই।

আল্লাহ কেবল "সালাত ও যাকাত" সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো বার্ষিক উৎসব পালন করতে বলেননি।


(খ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার যুক্তি কোথায়?

ঈদুল ফিতর বলা হয় রমাদান শেষের আনন্দোৎসব।

কিন্তু কুরআনে রমাদান শেষে কোনো উৎসব করার কথা বলা হয়নি, বরং তাকওয়া অর্জনের কথা বলা হয়েছে (২:১৮৩)।

ঈদুল আজহা বলা হয় হজ ও কুরবানির সঙ্গে সম্পর্কিত।

কিন্তু কুরআনে কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট দিন পালন করতে বলা হয়নি, বরং যারা হজ করতে যায়, তারা নির্দিষ্ট দিনে কুরবানি করে থাকে (২২:৩৬-৩৭)।


(গ) তাহলে কি মুসলিমরা বাইবেলের অনুসরণ করছে?

যদি কুরআন অনুসারে বিচার করি, তাহলে প্রচলিত ঈদ ঈসা (আঃ)-এর ঘটনাকে স্মরণ করার ধারণার সাথে মিলে যায়।

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার প্রচলন হাদিস ও ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, কিন্তু কুরআনে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।

তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—আমরা কি কুরআনের বিধান মেনে উৎসব পালন করছি, নাকি বাইবেলের ঈসা (আঃ)-এর ঘটনার ধারাবাহিকতাকে মেনে চলছি?


৪. ঈদ পালন করা কি উচিত নাকি পুনর্বিবেচনা করা উচিত?

(ক) যদি কুরআনের ভিত্তিতে চলতে চাই

তাহলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার কোনো কুরআনিক ভিত্তি নেই।

কুরআন অনুসারে কোনো নির্দিষ্ট দিনে ধর্মীয় উৎসব করা বাধ্যতামূলক নয়।

বরং কুরআন মানুষকে দৈনন্দিন সালাত, যাকাত, তাকওয়া এবং ন্যায়বিচারের উপর গুরুত্ব দিতে বলে।

(খ) যদি ঐতিহ্যের ভিত্তিতে চলতে চাই

তাহলে এটি মূলত পরবর্তী সময়ে প্রচলিত সামাজিক ও ঐতিহাসিক সংস্কৃতি থেকে এসেছে।

মাজুসি, খ্রিস্টান ও আরবি ঐতিহ্য থেকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ধারণা গঠিত হয়েছে।


৫. আমরা আসলে কী করছি?

"আমরা কি বাইবেলের এবাদত করছি?"

→ উত্তর:

প্রচলিত ঈদ মূলত সামাজিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অংশ, যা কুরআন নির্দেশিত নয়।

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ধারণা ফার্সি ও মাজুসি ঐতিহ্য এবং বাইবেলের কিছু ঘটনাসমূহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।

কুরআন অনুসারে, ঈদের বদলে আমাদের উচিত আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত বিধান—সালাত, যাকাত, তাকওয়া ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেওয়া।

কুরআন অনুসারে উৎসবের প্রকৃত ধারণা কী হওয়া উচিত?

কুরআনে "ঈদ" নামে কোনো বার্ষিক উৎসবের কথা বলা হয়নি, বরং মানুষের জন্য আনন্দ, প্রশান্তি, কৃতজ্ঞতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই কুরআনের আলোকে প্রকৃত উৎসবের ধারণা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—


১. আল্লাহর বিধান অনুযায়ী উৎসব হওয়া উচিত ন্যায়বিচারের দিন

(ক) প্রকৃত আনন্দ আসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে

কুরআনে বলা হয়েছে—

> لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
"আমি আমার রাসূলদের সুস্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি, এবং তাদের সঙ্গে কিতাব ও ন্যায়বিচারের মানদণ্ড (মিজান) দিয়েছি, যাতে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।" (সুরা হাদীদ ৫৭:২৫)


→ প্রকৃত "ঈদ" বা আনন্দের দিন হবে সেই দিন, যেদিন সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে কেউ অন্যায়ভাবে শোষিত হবে না, কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, এবং সব মানুষ সমান সুযোগ পাবে।

(খ) দরিদ্র ও নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত উৎসব

> فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلۡيَتِيمَ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ
"সে সেই ব্যক্তি, যে এতিমদের ধাক্কা দেয় এবং মিসকিনদের (অসহায়দের) আহারের ব্যাপারে উৎসাহিত করে না।" (সুরা মাউন ১০৭:২-৩)


→ তাই প্রকৃত উৎসব হওয়া উচিত অসহায়দের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং সমাজে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা।


২. কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন করা উচিত

(ক) আল্লাহর দেওয়া অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা

> فَٱذۡكُرُونِىٓ أَذۡكُرۡكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِى وَلَا تَكۡفُرُونِ
"তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো; এবং আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, কুফরী কোরো না।" (সুরা বাকারা ২:১৫২)

→ প্রকৃত ঈদ বা উৎসব হবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন, যেখানে মানুষ আল্লাহর দেওয়া অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেবে এবং তা সমাজের অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেবে।

(খ) অহংকার ও অপচয়ের মধ্যে নয়, বরং সংযম ও দানের মধ্যে আনন্দ

> وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا ۝ إِنَّ ٱلْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِ
"অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।" (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:২৬-২৭)

→ বর্তমান সময়ে ঈদ উদযাপন হয় অপচয়, বিলাসিতা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, যা কুরআনের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।

→ প্রকৃত উৎসব হওয়া উচিত অপচয় পরিহার করে সংযম ও দানশীলতার মাধ্যমে।


৩. প্রকৃত ঈদ বা উৎসব হবে সত্য প্রতিষ্ঠার দিন

(ক) সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে সেটাই হবে আনন্দের দিন

> وَقُلْ جَاءَ ٱلۡحَقُّ وَزَهَقَ ٱلۡبَٰطِلُ
"বলুন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলীন হয়েছে।" (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৮১)

→ প্রকৃত ঈদ হবে সেই দিন, যেদিন সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যায় ধ্বংস হবে এবং মানুষ ন্যায়বিচার ও শান্তি পাবে।

(খ) মিথ্যা বিশ্বাস ও ভ্রান্ত প্রথা থেকে মুক্তির দিনই হবে ঈদ

> وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِۦ عِلْمٌ
"যার কোনো প্রমাণ নেই, তার অনুসরণ করো না।" (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৩৬)


→ বর্তমান সময়ে প্রচলিত ঈদ যদি কুরআনসম্মত না হয় এবং সংস্কৃতিগত বা বাইবেল-জাত উৎসব হয়, তাহলে সেটি পালন করা কুরআনের শিক্ষার বিপরীত।

→ প্রকৃত ঈদ হবে সেই দিন, যেদিন মানুষ সত্যকে গ্রহণ করবে এবং মিথ্যা বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবে।

৪. প্রকৃত ঈদ হওয়া উচিত জ্ঞান অর্জনের উৎসব

(ক) জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির বিকাশই প্রকৃত মুক্তি

> يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
"আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।" (সুরা মুজাদালা ৫৮:১১)



→ প্রকৃত ঈদ হওয়া উচিত জ্ঞানচর্চার উৎসব, যেখানে মানুষ নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে নিজেদের উন্নত করবে।

প্রচলিত ঈদ বনাম কুরআনিক ঈদ:


তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

  • ঈদকে একটি প্রথাগত আনন্দোৎসব হিসেবে না দেখে, একে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন হিসেবে পালন করা উচিত।
  • দরিদ্র ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, দান-সদকা করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত।
  • মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সত্যের পক্ষে কাজ করা, এবং মানুষকে জ্ঞান ও শিক্ষার পথে উৎসাহিত করা উচিত।
  • প্রচলিত রীতির পরিবর্তে কুরআনের ভিত্তিতে উৎসবের ধারণা গড়ে তোলা উচিত।

শেষ কথা

প্রচলিত ঈদ কুরআনের নির্দেশিত কোনো উৎসব নয়, বরং এটি সংস্কৃতিগত ও ঐতিহাসিকভাবে গঠিত একটি প্রচলন। কুরআনের দৃষ্টিতে প্রকৃত ঈদ হওয়া উচিত ন্যায়বিচার, সত্য প্রতিষ্ঠা, কৃতজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের উৎসব।

আপনি কি মনে করেন, আমরা প্রচলিত ঈদের পরিবর্তে কুরআন-সম্মত একটি নতুন উৎসব ধারণা গড়ে তুলতে পারি?

ফিতর শব্দের অর্থ;

"ফিতর" (فطر) শব্দটি মূলত আরবি রুট "ف-ط-ر" (Fa-Ta-Ra) থেকে এসেছে। এর মৌলিক অর্থ হলো ভাঙা, বিদীর্ণ করা, কাটা বা কিছু প্রথমবার সৃষ্টি করা। এটি এমন কিছুকে বোঝায় যা আগে অক্ষত ছিল এবং হঠাৎ করে আলাদা হয়ে গেছে বা নতুনভাবে উদ্ভূত হয়েছে।

কোরআনে ফিতর শব্দের ব্যবহার

কোরআনে "فطر" শব্দমূল থেকে নির্গত বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো—

1. سورة الإنفطار (আস-ইনফিতার) 82:1

إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتْ

"যখন আকাশ বিদীর্ণ (ফাটল) হবে।"

এখানে "انفطرت" এসেছে "فطر" থেকে, যার অর্থ বিদীর্ণ হওয়া বা ফেটে যাওয়া।

2. سورة الأنعام (আল-আন'আম) 6:79

إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ

"নিশ্চয়ই আমি আমার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি তাঁর দিকে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।"

এখানে "فطر" শব্দটি সৃষ্টি করা বা প্রথমবার আকার দেওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

3. سورة عبس (আবাসা) 80:26

ثُمَّ شَقَقْنَا ٱلْأَرْضَ شَقًّۭا فَأَنۢبَتْنَا فِيهَا حَبًّۭا

"অতঃপর আমরা জমিনকে ফাটিয়ে দিলাম এবং এতে শস্য উৎপন্ন করলাম।"

যদিও এখানে "شق" (শাক্কা) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু অর্থগতভাবে এটি "ফিতর" এর মতোই ফাটিয়ে দেওয়া বা বিদীর্ণ করা বোঝায়।


প্রাকৃতিক উদাহরণ: বীজ থেকে গাছ: যখন একটি বীজ মাটির নিচে থাকে, এটি প্রথমে ফেটে যায় এবং অঙ্কুর গজায়। এটিই প্রকৃত "ফিতর"।

ভোরের আলো: রাতে অন্ধকার থাকে, কিন্তু ভোর হওয়ার সময় আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যা বিদীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়া বোঝায়।



No comments:

Post a Comment

দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা কি ইসলামের অংশ? কোরান-ভিত্তিক পোশাক বিশ্লেষণ

  কোরানে কী ধরনের পোশাকের কথা বলা হয়েছে? দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা কি ইসলামের অংশ নাকি আরব সংস্কৃতি? কোরানভিত্তিক যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ। ❝ কি সত্...