"জুম্মা" শব্দের রুট অর্থ কী?
কুরআনে "জুমু'আ" (ٱلْجُمُعَةِ) শব্দটি এসেছে সূরা আল-জুমু'আ (৬২:৯)-তে। প্রচলিত অনুবাদে এটি "জুমার নামাজ" বা "শুক্রবারের নামাজ" বোঝানো হয়। তবে রুট শব্দ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এর প্রকৃত অর্থ ভিন্ন।
জুম্মা শব্দের মূল রুট:
১. ٱلْجُمُعَةِ (Al-Jumu'ah)
- রুট শব্দ: ج-م-ع (جَمَعَ - Jama’a)
- মূল অর্থ: একত্রিত করা, সমবেত হওয়া, সংহতি গঠন করা, সংগৃহীত করা।
- অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অর্থ: কোনো কিছু একত্র করা, জনগণের সম্মিলন, একটি বৃহৎ সমাবেশ।
সূরা আল-জুমু'আ ৬২:৯ এর রুট বিশ্লেষণ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا إِذَا نُودِىَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ فَٱسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ وَذَرُوا ٱلْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
মূল শব্দ ও তাদের রুট অর্থ:
- يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا (Ya Ayyuhal-Ladhina Amanu) → হে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা
- إِذَا نُودِىَ (Idha Nudhiya) → যখন ঘোষণা করা হয়, আহ্বান করা হয়
- لِلصَّلَوٰةِ (Lissalat) → সংযোগ, শৃঙ্খলা, সিস্টেম প্রতিষ্ঠা
- مِن يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ (Min Yawmi Al-Jumu’ah) → একত্রিত হওয়ার দিন, সমাবেশের দিন
- فَٱسْعَوْا (Fas’aw) → প্রচেষ্টা করো, উদ্যোগ নাও, দ্রুত পদক্ষেপ নাও
- إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ (Ila Zikrillah) → আল্লাহর স্মরণ বা আল্লাহর বার্তা গ্রহণ
- وَذَرُوا ٱلْبَيْعَ (Wadharul Bay’) → লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দাও
- ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ (Dhalikum Khayrun Lakum) → এটি তোমাদের জন্য উত্তম
মূল রুট অর্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা:
➡ "হে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা! যখন সালাত (সংযোগ, শৃঙ্খলা) প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান করা হয় একত্রিত হওয়ার দিনে (يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ), তখন আল্লাহর স্মরণ ও নির্দেশনার দিকে ধাবিত হও, আর বাণিজ্যিক লেনদেন (ব্যবসা-বাণিজ্য) ছেড়ে দাও। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।"
➡ এখানে "জুম্মা" মানে শুক্রবার নয়, বরং "একত্রিত হওয়ার দিন" বা "সমাবেশের দিন"।
➡ "সালাত" এখানে কোনো নির্দিষ্ট নামাজ নয়, বরং শৃঙ্খলা, সংযোগ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।
➡ "জুমু'আ" শব্দটি আসলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মানুষকে একত্রিত হওয়ার এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি ব্যবস্থা বোঝায়।
প্রচলিত নামাজের ধারণা কেন মেলে না?
১. "জুম্মার সালাত" বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো কোনো আনুষ্ঠানিক রিচুয়াল বোঝানো হয়নি। বরং একটি সামষ্টিক সমাবেশের মাধ্যমে সামাজিক সংযোগ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান বোঝানো হয়েছে।
২. কুরআনে শুক্রবার (يَوْمُ ٱلْجُمُعَةِ) বলে নির্দিষ্ট কোনো বার উল্লেখ নেই। বরং জুমু'আ মানে হলো যেকোনো দিন যখন সমাজ বা জাতি একত্রিত হয়।
3. "সালাত" মানে শুধুমাত্র শারীরিক প্রার্থনা নয়, বরং নৈতিক, সামাজিক, ও আইনগত সংযোগ।
4. "বাণিজ্য ছেড়ে দেওয়ার" কথা এসেছে, যা প্রমাণ করে যে এটি কোনো দুনিয়াবিমুখ ইবাদত নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান।
উপসংহার:
➡ "জুম্মা" মানে শুক্রবারের নামাজ নয়। বরং এটি এমন একটি সমাবেশের দিন, যখন সমাজ একত্রিত হয়ে সত্য, ন্যায়বিচার ও সঠিক নির্দেশনার দিকে মনোযোগ দেয়।
➡ "জুম্মার সালাত" মানে নামাজ পড়া নয়, বরং মানুষকে সংযুক্ত করা, একত্র করা, এবং কুরআনের আলোকে সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।
➡ এটি এমন একটি দিন যখন ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছেড়ে সবাই সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হয়।
No comments:
Post a Comment