আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন—তাহলে আমি দায়ী কেন?
অনেকে প্রশ্ন করে—"যদি হেদায়েত পাওয়ার ক্ষমতা কেবল আল্লাহর হাতে থাকে, তাহলে আমি দায়ী কেন? যদি আল্লাহ ইচ্ছা না করেন, তাহলে আমি তো হেদায়েত পাবোই না!"
এই প্রশ্নের পেছনে ধারণা হলো, হেদায়েত পাওয়া বা না-পাওয়া পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল, এতে মানুষের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু কুরআন থেকে বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানুষেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
১. "আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন"—এর প্রকৃত অর্থ কী?
কুরআনে এসেছে:
“আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে হেদায়েত দেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন, পথভ্রষ্ট করেন।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৪)
এই আয়াতের সাধারণ অর্থ দেখে মনে হতে পারে যে, আল্লাহ একপাক্ষিকভাবে কাউকে পছন্দ করে হেদায়েত দেন, আর কাউকে পথভ্রষ্ট করেন। কিন্তু কুরআনের অন্যান্য আয়াত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, আল্লাহ কখনো অন্যায়ভাবে কাউকে হেদায়েত থেকে বঞ্চিত করেন না, বরং মানুষের নিজের কর্মকাণ্ড ও মনোভাবের ওপর নির্ভর করে সে হেদায়েত পাবে কি না।
২. কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, হেদায়েত পাওয়ার জন্য মানুষের ভূমিকা আছে
(ক) মানুষ যদি সত্যের জন্য চেষ্টা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দেন
“যারা আমাদের জন্য চেষ্টা করে, অবশ্যই আমরা তাদের আমাদের পথে পরিচালিত করব।” (সূরা আল-আনকাবূত ২৯:৬৯)
এই আয়াত স্পষ্ট করে যে, মানুষ যদি সত্যের সন্ধান করে, চিন্তা-ভাবনা করে এবং যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, তবে আল্লাহ তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।
(খ) আল্লাহ কেবল তাদেরই হেদায়েত দেন, যারা সত্যের প্রতি আন্তরিক
“আল্লাহ তাদেরকেই হেদায়েত দেন, যারা তাঁর দিকে ফিরে আসে।” (সূরা আশ-শূরা ৪২:১৩)
যে ব্যক্তি সত্যকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত, নিজের ভুল স্বীকার করতে পারে, অহংকার থেকে মুক্ত—আল্লাহ তাকেই হেদায়েত দেন।
(গ) যারা সত্য গ্রহণ করতে চায় না, তারা নিজেরাই পথ হারায়
“আমি তাদের অন্তরে ও কানে তালা লাগিয়ে দিয়েছি এবং তাদের দৃষ্টির ওপর আবরণ রেখেছি। ফলে তারা কখনো হেদায়েত পাবে না।” (সূরা আল-কাহফ ১৮:৫৭)
এখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ তখনই কারও অন্তরে তালা লাগান, যখন সে নিজেই সত্য গ্রহণ করতে চায় না। যখন কেউ অহংকার, অন্ধবিশ্বাস ও মিথ্যার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন সে নিজের জন্য হেদায়েতের পথ বন্ধ করে ফেলে।
৩. তাহলে, "আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন"—এর অর্থ কী?
এটার অর্থ হলো:
- আল্লাহ কাকে হেদায়েত দেবেন, তা নির্ভর করে মানুষের নিজের কর্মকাণ্ডের ওপর।
- যে সত্য জানতে চায়, চিন্তা করে, যুক্তি দিয়ে বোঝে—আল্লাহ তাকেই হেদায়েত দেন।
- যে অহংকার করে, চিন্তা না করে অন্ধভাবে যা পেয়েছে তাই মেনে নেয়—আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন।
কুরআন বলে:
“আল্লাহ কোনো মানুষের প্রতি জুলুম করেন না, কিন্তু মানুষ নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করে।” (সূরা ইউনুস ১০:৪৪)
অর্থাৎ, আল্লাহ জোর করে কাউকে পথভ্রষ্ট করেন না, বরং মানুষ নিজেই তার পছন্দ অনুযায়ী সত্য গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করে।
৪. তাহলে দায় কার?
➡ দায় সম্পূর্ণ তোমারই, কারণ আল্লাহ জোর করে কাউকে পথভ্রষ্ট করেন না, বরং মানুষ নিজেই তার পথ নির্ধারণ করে।
➡ যে সত্য জানার জন্য চেষ্টা করে, সে হেদায়েত পাবে। আর যে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে পথভ্রষ্ট হবে।
মূলকথাঃ
✅ "আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন" মানে এটা নয় যে, আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে বেছে নেন আর কাউকে ফেলে দেন।
✅ বরং যে সত্য খোঁজার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকেই হেদায়েত দেন।
✅ আর যে অহংকার করে, যুক্তি মানতে চায় না, চিন্তা করে না—আল্লাহ তাকে তার ভুল পথেই ছেড়ে দেন।
No comments:
Post a Comment