🔍 ধর্মান্ধ ও ধার্মিক: চেনার উপায় ও পার্থক্য
মানুষের বিশ্বাস এবং তার প্রকাশভঙ্গি দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা কতটুকু ধারণ করেছে, তা বোঝার অন্যতম সূচক। কেউ যদি ধর্মের নাম করে অসহিষ্ণুতা, বিদ্বেষ ও অন্ধত্ব ছড়ায়, তবে তা প্রকৃত ধার্মিকতা নয়, বরং ধর্মান্ধতার পরিচায়ক। পক্ষান্তরে, সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি হয় সংযমী, বিনয়ী ও যুক্তিবাদী। আসুন, ধর্মান্ধ ও ধার্মিকদের পার্থক্যগুলো পর্যবেক্ষণ করি।
🔴 ধর্মান্ধদের বৈশিষ্ট্য:
❌ গালির আশ্রয় নেওয়া: এরা যুক্তি দিয়ে আলোচনা করতে ব্যর্থ হয়ে দ্রুত গালাগালির আশ্রয় নেয়। নীতি-নৈতিকতার ধার না ধরে কটূক্তি করাকে তারা সাহস মনে করে।
❌ অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি অসম্মান: বিনয়ের বিপরীতে তারা ‘তুই-তুকারি’ করে কথা বলে, যেন অপমান করা তাদের অধিকার। অথচ কুরআন বলে, "তোমরা ভালো ও শালীন কথা বলো" (১৭:৫৩)।
❌ অন্যের পরিচয় ও জন্ম নিয়ে কটূক্তি করা: তারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পছন্দ করে এবং কাউকে ‘জারজ’ বা অসম্মানজনক উপাধিতে অভিহিত করা তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। অথচ আল্লাহ বলেছেন, "তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকো না" (৪৯:১১)।
❌ ধর্মীয় লেবাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা: বাহ্যিক লেবাস যেমন দাঁড়ি-টুপি বা বিশেষ পোশাককে তারা ধার্মিকতার মূল মাপকাঠি বানিয়ে ফেলে, অথচ আল্লাহ মানুষের অন্তরকেই দেখেন (২২:৩৭)।
❌ অহংকার ও বিদ্বেষ ছড়ানো: তারা নিজেদের মতের বাইরে কাউকে সহ্য করতে পারে না, এবং অহংকারের সাথে অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করে কথা বলে।
❌ বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা: তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বানান ও ভাষার প্রতি কোনো যত্ন নেয় না, যা তাদের অসচেতন মানসিকতার প্রতিফলন।
❌ মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে যাওয়া: আলোচ্য বিষয়ের উপর কথা বলার পরিবর্তে তারা বিষয়বস্তুকে ঘুরিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে নিয়ে যায়।
❌ ভিন্নমতের প্রতি চরম অসহিষ্ণুতা: তারা ভিন্ন মতের মানুষদের যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা না করে সরাসরি ‘নাস্তিক’, ‘কাফের’, ‘মুরতাদ’, ‘পতিতা’, ‘দালাল’, ‘সমকামী’ ইত্যাদি অপবাদ দেয়। অথচ কুরআন বলে, "তোমরা জ্ঞানের ভিত্তি ছাড়া কাউকে কাফের বলো না" (৪:৯৪)।
🟢 প্রকৃত ধার্মিকদের বৈশিষ্ট্য:
✅ সুস্থ ও শালীন ভাষার ব্যবহার: সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি কখনোই গালাগালি করে না। তিনি কুরআনের নির্দেশ মেনে বলেন, "অত্যন্ত সুন্দর ও উত্তম ভাষায় কথা বলো" (১৬:১২৫)।
✅ গঠনমূলক আলোচনা করেন: তারা অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং প্রমাণ ও যুক্তির মাধ্যমে আলোচনা করেন (১৭:৩৬)।
✅ বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল: তারা মতের অমিল হলেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন না। বরং কুরআনের নীতি মেনে ভদ্রতা বজায় রাখেন (২৯:৪৬)।
✅ লেবাসের অহংকার করেন না: তারা জানেন, প্রকৃত ধার্মিকতা বাহ্যিক পোশাকের মধ্যে নয়, বরং নৈতিকতা ও কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায় (৪৯:১৩)।
✅ অন্যের ঈমান যাচাইয়ের ধৃষ্টতা দেখান না: সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি অন্যের ঈমান মাপার দায়িত্ব নেন না, কারণ একমাত্র আল্লাহ-ই অন্তরের খবর জানেন (৬৪:৪)।
No comments:
Post a Comment