হুবাল কে ছিলেন?

"হুবাল" শব্দটি কুরআনে কোথাও পাওয়া যায় না এবং এটি আল্লাহর কোনো নামও নয়।

হুবাল কে ছিলেন?

হুবাল ছিল মক্কার মুশরিকদের প্রধান দেবতা, যার মূর্তি কাবাঘরে স্থাপিত ছিল। ইসলামের ইতিহাস অনুসারে, মক্কার কুরাইশরা হুবালকে প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করত এবং বিশ্বাস করত যে, সে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে।

কুরআন কী বলে?

কুরআনে হুবাল নামটি একবারও উল্লেখ করা হয়নি। তবে কুরআন বহু জায়গায় স্পষ্টভাবে বলেছে যে, মুশরিকরা অনেক দেব-দেবীর উপাসনা করত এবং আল্লাহর সাথে শরিক করত, যা কঠোরভাবে নিন্দিত হয়েছে।

🔹 সূরা আন-নাজম (৫৩:২৩)
"এগুলো তো নামমাত্র কিছু, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছ। আল্লাহ এসব সম্পর্কে কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি।"

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, লাত, উজ্জা, মানাতসহ অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা ছিল মানুষের নিজস্ব মনগড়া ধারণা।

হুবাল কি আল্লাহর নাম হতে পারে?

না, আল্লাহ এক এবং অনন্য (সূরা ইখলাস ১১২:১-৪)।
আল্লাহর ৯৯টি সুন্দর নাম রয়েছে (আস্মাউল হুসনা), যেখানে "হুবাল" নামে কোনো নাম নেই। অতএব, হুবালকে আল্লাহর নাম বলা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

উপসংহার:

📌 "হুবাল" কাবার প্রধান দেবতা ছিল মক্কার মুশরিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী, কিন্তু আল্লাহর কোনো নাম বা পরিচয় নয়। কুরআনের দৃষ্টিতে, এটি মুশরিকদের তৈরি করা এক ভ্রান্ত উপাস্য মাত্র। 

****************************************

সূরা আন-নাজম (৫৩:১৯-২৩) শব্দ বিশ্লেষণ ও অর্থ

🔹 أَفَرَءَيْتُمُ (Afa-ra’aitumu)

رَأَى (Ra’a) → দেখা, অনুধাবন করা
أَفَرَءَيْتُمُ → "তাহলে কি তোমরা লক্ষ্য করেছ?" / "তোমরা কি চিন্তা করেছ?"
🔹 ٱللَّـٰتَ (Al-Lāt)

মূল শব্দ لَتَ (Lat) → এক মূর্তির নাম (যেটি আরব মুশরিকদের মাঝে পূজিত হত)
🔹 وَٱلْعُزَّىٰ (Al-‘Uzzā)

عَزَّ (Azzā) → শক্তি, সম্মান
ٱلْعُزَّىٰ → আরবদের মাঝে পূজিত এক দেবীর নাম, যাকে তারা শক্তিশালী মনে করত
🔹 وَمَنَوٰةَ (Manāt)

مَنَى (Manā) → পরিমাপ করা, ভাগ্য নির্ধারণ করা
مَنَوٰةَ → এক দেবীর নাম, যার সাথে ভাগ্য বা নির্ধারিত পরিণতির ধারণা যুক্ত ছিল
🔹 ٱلثَّالِثَةَ (Ath-Thālithah)

ثَلَاثَة (Thalāthah) → তিন
ٱلثَّالِثَةَ → তৃতীয়
🔹 ٱلْأُخْرَىٰ (Al-Ukhra)

أُخْرَىٰ (Ukhra) → অন্য / পরবর্তী
🔹 أَلَكُمُ ٱلذَّكَرُ وَلَهُ ٱلْأُنثَىٰ (A’lakumu adh-Dhakaru wa lahu al-Unthā?)

ذَكَرُ (Dhakar) → পুরুষ
أُنثَىٰ (Unthā) → নারী
أَلَكُمُ ٱلذَّكَرُ وَلَهُ ٱلْأُنثَىٰ؟ → "তাহলে তোমাদের জন্য পুরুষ, আর তাঁর জন্য নারী?"
🔹 تِلْكَ إِذًۭا قِسْمَةٌۭ ضِيزَىٰ (Tilka idhan qismatun ḍīzā)

تِلْكَ (Tilka) → সেটি / ঐ
إِذًۭا (Idhan) → তাহলে / সেক্ষেত্রে
قِسْمَةٌ (Qismatun) → বিভাজন, বণ্টন
ضِيزَىٰ (Ḍīzā) → অন্যায্য, অসম, ভুল
তাহলে এটি এক অন্যায্য বণ্টন!
🔹 إِنْ هِىَ إِلَّا أَسْمَآءٌۭ سَمَّيْتُمُوهَآ (In hiya illa asmā’un sammaytumūhā)

إِنْ (In) → শুধুমাত্র / নয় কিন্তু
هِىَ (Hiya) → এটি / সে
إِلَّا (Illā) → শুধু
أَسْمَآءٌ (Asmā’un) → নামসমূহ
سَمَّيْتُمُوهَآ (Sammaytumūhā) → তোমরা এগুলোর নাম রেখেছ
"এগুলো তো কেবল কিছু নাম মাত্র, যেগুলো তোমরা নিজে রেখেছ!"
🔹 أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُمْ (Antum wa ābā’ukum)

أَنتُمْ (Antum) → তোমরা
وَءَابَآؤُكُمْ (Wa ābā’ukum) → এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা
🔹 مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَٰنٍۢ (Mā anzala Allāhu bihā min sulṭān)

مَّآ (Mā) → না / কিছুই
أَنزَلَ (Anzala) → নাজিল করা, অবতীর্ণ করা
ٱللَّهُ (Allāhu) → আল্লাহ
بِهَا (Bihā) → এর জন্য / এগুলোর জন্য
مِن سُلْطَٰنٍۢ (Min sulṭān) → কোনো প্রমাণ / ক্ষমতা
"আল্লাহ এ সম্পর্কে কোনো দলিল নাজিল করেননি।"
🔹 إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ (In yattabi‘ūna illā aẓ-ẓanna)

إِن (In) → তারা শুধু
يَتَّبِعُونَ (Yattabi‘ūna) → অনুসরণ করে
إِلَّا (Illā) → শুধু
ٱلظَّنَّ (Aẓ-ẓanna) → ধারণা, অনুমান
"তারা কেবল ধারণা অনুসরণ করে।"
🔹 وَمَا تَهْوَى ٱلْأَنفُسُ (Wa mā tahwā al-anfusu)

وَمَا (Wa mā) → এবং যা
تَهْوَى (Tahwā) → কামনা করে, আকাঙ্ক্ষা করে
ٱلْأَنفُسُ (Al-Anfusu) → আত্মা, মন
"এবং যা তাদের মন চায়।"
🔹 وَلَقَدْ جَآءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ ٱلْهُدَىٰ (Wa laqad jā’ahum min rabbihimul hudā)

وَلَقَدْ (Wa laqad) → এবং অবশ্যই
جَآءَهُم (Jā’ahum) → তাদের কাছে এসেছে
مِّن رَّبِّهِمُ (Min rabbihim) → তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে
ٱلْهُدَىٰ (Al-Hudā) → সঠিক পথনির্দেশ
"অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াত (সত্য পথনির্দেশ) এসেছে!"

সারসংক্ষেপ
কুরআন এখানে লাত, উজ্জা ও মানাতকে কেবল নামমাত্র কিছু বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে, এগুলো মানুষের বানানো ধারণা, যার কোনো ভিত্তি নেই। আল্লাহ এগুলোকে তাঁর কন্যা হিসেবে মানেন না এবং এসব দেবীগুলোর পূজা করার কোনো অনুমতি দেননি। মানুষ এগুলোকে কেবল অনুমান এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে গ্রহণ করেছে।

এখানে কোরআন দ্বৈতনীতি (double standard) নিয়েও সমালোচনা করেছে—যেখানে মুশরিকরা নিজেদের জন্য পছন্দ করত পুরুষ সন্তান, কিন্তু আল্লাহর জন্য নারী সন্তান বানিয়ে নিত, যা এক ধরনের অবিচার এবং যুক্তিহীন বিভক্তি।